নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের টঙ্গীর শিল্পাঞ্চলে এক সময় কর্মচাঞ্চল্যে মুখর ছিল নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস। হাজারো শ্রমিকের পদচারণায় সরব এই কারখানাটি এখন ইতিহাসের সাক্ষী। প্রায় দুই দশক আগে শ্রমিক মালিকানায় হস্তান্তরিত এই মিলটি আজ ঋণ ও সংকটের বোঝা নিয়ে টিকে আছে কেবল নামমাত্রভাবে। রাষ্ট্রায়ত্ত বস্ত্রকলগুলো দীর্ঘদিন লোকসানে চলার কারণে ২০০১ সালে সরকার “Workers-run Textile Mills Project”–এর আওতায় দেশের কয়েকটি মিল শ্রমিকদের হাতে পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করে। তারই অংশ হিসেবে নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস'র মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় শ্রমিক-কর্মচারী মালিকানা পরিচালনা বোর্ডের কাছে। চুক্তি অনুযায়ী, মিলটি আইডিএ ক্রেডিটের কাছে ১৬ কোটি টাকা এবং স্টোরের মালামাল বাবদ প্রায় ২ কোটি টাকা ঋণের দায়ে ছিল। মোট ১৮ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকারে শ্রমিক বোর্ড প্রতি ত্রৈমাসিকে ৪০ লক্ষ টাকা পরিশোধের চুক্তি করে সরকারের সঙ্গে। চুক্তিতে সরকারের সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি থাকলেও পরবর্তীতে শ্রমিক বোর্ড সে সহযোগিতা পায়নি। ফলে উৎপাদন সম্প্রসারণ বা আধুনিকায়নের সুযোগ না থাকায় মিলটি ধীরে ধীরে লোকসানে পড়তে থাকে, বাড়তে থাকে ঋণের বোঝা। ২০১৩ সালে শ্রমিক বোর্ড সরকারের কাছে সুদ মওকুফের আবেদন জানালে সরকার ৬৫% সুদ ও ১০০% দণ্ডসুদ মওকুফ করে দেয়। বোর্ড তখন ২২ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সে সময় অর্থ পরিশোধ সম্ভব হয়নি বলে জানায় বোর্ড। বর্তমানে ৪৪ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এক সময়ের বৃহৎ টেক্সটাইল মিলটি এখন টিকে আছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে সীমিত আকারে ডাইং ফ্যাক্টরি চালু রাখা হয়েছে এবং কিছু গুদামঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শ্রমিক বোর্ডের ব্যাংক হিসাবে রয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকার বেশি ব্যালেন্স। বোর্ডের দাবি, সরকারের আর্থিক সহায়তা বা সুদ মওকুফ পেলে তারা পুরো ঋণ পরিশোধ করে মিলটিকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে পারবে।নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলের বর্তমানে মোট ৮১৪ জন শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন। তাদের দাবি, সরকারের সহযোগিতা পেলে জয়েন্ট পার্টনার নিয়ে মিলটি আবার চালু করা সম্ভব। এতে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে এবং সরকারও পাবে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব। মিলটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবুল হাসেম বলেন, আমরা চাই সরকার আমাদের প্রতি আস্থা রাখুক। যদি সুদ মওকুফ করে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়, তাহলে আমরা একবারে সমস্ত টাকা পরিশোধ করে নিউ অলিম্পিয়াকে আবারও চালু করে দিতে পারব। এতে শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটবে, টঙ্গীর অর্থনীতি আবারও সচল হবে। যদিও মিলটি বর্তমানে বন্ধপ্রায়, তবুও শ্রমিকরা এখনো আশাবাদী। তারা বিশ্বাস করে, সরকার সামান্য সহযোগিতা দিলেই নিউ অলিম্পিয়া মিলস আবারও টঙ্গীর শিল্পায়নের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। স্থানীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, শ্রমিকদের উদ্যোগ এবং সরকারি সহযোগিতা মিললে এই প্রকল্পটি শ্রমিক মালিকানাধীন শিল্প পুনরুজ্জীবনের একটি সফল দৃষ্টান্ত হতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ জাহাঙ্গীর আলম || বার্তা সম্পাদক: শাকিল মাহমুদ শান্ত || টঙ্গী দত্তপাড়া, জহির মার্কেট, টঙ্গী গাজীপুর ঢাকা। E-mail: editorgrambarta@gmail.com যোগাযোগ : ০১৯১১-২৪৫৮৯৫ | ০১৯১৩-৩৪৪৮১৭ | ০১৭৩১-৬১৬২১৫ | ০১৯৭২-৬১৬২১৫