নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের টঙ্গী মরকুন মধ্যপাড়ায় শুক্রবার ভোরের এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হলো স্থানীয় মানুষ। সকাল সাতটা বাজতে না বাজতেই রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক নবজাতকের ক্ষীণ কান্না। প্রথমে সবাই ভেবেছিল আশেপাশে কোনো শিশুর কান্না, কিন্তু আশপাশে কেউ না থাকায় সন্দেহ দানা বাঁধে। শব্দটি আরও স্পষ্ট হতে থাকলে এলাকার লোকজন কান্নার উৎস খুঁজতে শুরু করেন। কিছুটা এগোতেই তারা বিস্ময়ে দেখেন শব্দ আসছে রাস্তার পাশের নরম মাটির নিচ থেকে! দ্রুত কয়েকজন মাটি সরাতে শুরু করেন। প্রথমে দেখা যায় কাপড়ের কোণা, তারপর পুরো কাপড়। আর তার নিচে এক নবজাতক শিশু! আরও ভয়াবহ বিষয় হলো শিশুটির বুকের ওপর চাপা দেওয়া ছিল একটি ইট। জন্মের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মাথায় নবজাতককে মাটিচাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে পড়েন। পথচারীরা শিশুটিকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে স্থানীয় এক নিঃসন্তান নারী শিশুটিকে দত্তক হিসেবে আশ্রয় নেন। ঘটনার পর পুরো এলাকায় শুরু হয় হৈচৈ। কে এমন অমানবিক কাজ করতে পারে? সন্দেহ গিয়ে পড়ে মহিউদ্দিনের বাড়ির ভাড়াটিয়া দম্পতি খালেদা ও স্বপনের ওপর। পাঁচ বছর ধরে তারা ওই বাড়িতে থাকেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, খালেদা (৩০)–এর বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানা এলাকায়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, ১৩ নভেম্বর সকাল ৭টায় তিনি নিজের ঘরেই সন্তান জন্ম দেন। এরপর স্বামী স্বপনের সহযোগিতায় বাড়ির পাশেই ছোট একটি গর্ত খুঁড়ে নবজাতককে কাপড়ে মুড়িয়ে সেখানে রেখে তার বুকের ওপর ইট চাপা দেন। এরপর স্বাভাবিক আচরণ করে ঘরে ফিরে বসে থাকেন যেন কিছুই হয়নি। কেন এমন নির্মমতা? পুলিশের প্রশ্নে দম্পতি জানান, অভাব-অনটন আর দায়িত্ব নিতে না পারার ভয় থেকেই এ সিদ্ধান্ত। তাদের এই স্বীকারোক্তিতে এলাকায় নেমে আসে ক্ষোভ, শোক ও অবিশ্বাসের ঢেউ। একজন মা নিজের নবজাতককে মাটিচাপা দিতে পারে এ যেন মানবতার অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। ঘটনার তদন্তকারী টঙ্গী পূর্ব থানার এসআই বায়েজিদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে খালেদা শিশুটির মা বলে স্বীকার করেছে। দুজনেই শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় মানবিক কারণে বাড়িওয়ালার জিম্মায় রাখা হয়েছে। কেউ মামলা করলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশুটি এখন নিরাপদ রয়েছে। মানুষের করুণায় জীবনের আলোতে ফিরে এসেছে সেই নবজাতক, যাকে অন্ধকারে চাপা দিয়ে দিতে চেয়েছিল তারই জন্মদাতা। মরকুনের সেই সকালের ছোট্ট কান্নাটি আজ পুরো এলাকার মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে মানুষের হৃদয়ে নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে, মানবতা এখনো বেঁচে আছে।